Uncategorized

ব্রেন স্ট্রোক: ধরন, কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

ব্রেন স্ট্রোক: ধরন, কারণ, লক্ষণ ও করণীয়

অথবা

ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে যেসব সতর্কতা মেনে চলা জরুরি

অথবা

প্রাথমিক চিকিৎসা ও সচেতনতা কমিয়ে আনবে ব্রেন স্ট্রোকের মৃত্যুঝুঁকি

বিশ্বব্যাপী অ-সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে মৃত্যুর দিক থেকে হৃদরোগের পরেই অবস্থান স্ট্রোকের। এছাড়া স্ট্রোক পঙ্গুত্বেরও অন্যতম বড় কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও-এর মতে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল ও নিম্ন আয়ের দেশের নাগরিকরা স্ট্রোকের অধিক ঝুঁকিতে ভুগেন। তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা ও সচেতনতাই কমিয়ে আনতে পারে ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা।

সাধারণত কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তার মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। প্রধানত দুই ধরনের ব্রেন স্ট্রোক হচ্ছে, ইসকেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক। মস্তিষ্কের রক্ত নালি বন্ধ থাকার ফলে যে স্ট্রোক হয় তাকে বলা হয় ইসকেমিক স্ট্রোক। আর মস্তিষ্কের রক্তের নালি ছিঁড়ে রক্তক্ষরণজনিত যে স্ট্রোক হয়, সেটি হচ্ছে হেমোরেজিক স্ট্রোক। উভয় স্ট্রোকেই মস্তিষ্ক তার সাধারণ কার্যকারিতা হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চিকিৎসকদের মতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া, ধূমপান অথবা অন্য নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্তি, রক্তে কোলেস্টোরেলের আধিক্য ও ডায়াবেটিকের ফলেও কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ বুঝতে পারলে ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে মৃত্যুঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকার পাশাপাশি পঙ্গুত্ব এড়ানো সম্ভব।

 

স্ট্রোক হলে তা কীভাবে বুঝবেন?

সাধারণত ৬০-বছরের বেশি বয়সী রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। কিন্তু ইদানীং তরুণ, এমনকি শিশুরাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। নারীদের তুলনায় পুরুষদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। স্ট্রোকের প্রচলিত লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে হঠাৎ করে মুখ বেঁকে যাওয়া, আচমকা হাত, পা বা শরীরের কোনো একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়া, হাত ওপরে তুলতে না পারা, চোখে ঝাপসা/ অন্ধকার দেখা, কথা বলতে অসুবিধা হওয়া বা কথা জড়িয়ে যাওয়া, ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া, জিহ্বা অসাড় হয়ে, মুখ বেঁকে যাওয়া, শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যাওয়া/জ্ঞান হারানো, হঠাৎ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাজ পড়ার মতো তীব্র মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি। স্ট্রোকের লক্ষণকে অনেকে হার্ট অ্যাটাক ভেবে ভুল করে বসেন। কিন্তু দুটি বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা  মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এটি মূলত বড় ধরণের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।

 

স্ট্রোক হলে প্রাথমিকভাবে করণীয়:

স্ট্রোকের লক্ষণ একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হয়। অনেকে স্ট্রোক হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যান। এ কারণে আর চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই কারও মধ্যে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এখানে সবচেয়ে জরুরি হল ‘সময়’। যদি স্ট্রোকের পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রোগী যতো দ্রুত চিকিৎসা পাবে, ক্ষতির আশঙ্কা ততোই কমবে। ক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে বিছানায় বা মেঝেতে কাত করে শুইয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে, না হলে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়া, রোগীকে বাতাস করা, আলো বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখা, রোগীর আশেপাশে ভিড় করে কান্নাকাটি না করা, গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দেয়া, যেন রোগী শ্বাস নিতে পারেন; এসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। এছাড়া, রোগী জ্ঞান হারালে তার মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কি না, ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে। তবে এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোন ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। কারণ একেক ধরনের স্ট্রোকের ওষুধ একেক রকম হয়ে থাকে।

 

প্রথম কয়েক ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ:

রোগীর মাঝে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে, রোগীকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করা ও মৃত্যু-ঝুঁকি থেকে নিরাপদ রাখা অনেকটাই সম্ভব। সাধারণত স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে আই ভি থ্রম্বোলাইসিস ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে রক্তনালীর ব্লক ছুটিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করা হয়। এই বিশেষ ইঞ্জেকশন ১৯৯২ সাল থেকে ইউরোপ, আমেরিকায় স্ট্রোকের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের দেশে ২০১৮ সালে একটি বেসরকারি মেডিসিন প্রতিষ্ঠান এই জীবন রক্ষাকারী মেডিসিন আমদানি করে। তাও মাত্র শুধু ঢাকায় ও চট্রগ্রাম এর দুই-একটি হাসাপাতালে এটি সহজলভ্য রয়েছে। আর রোগীকে যদি লক্ষণ দেখা দেয়ার ৮ থেকে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসার জন্য আনা হয় তাহলে মেকানিক্যাল থ্রম্বেকটমি করা হয়ে থাকে।

এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা ক্যাথেটার দিয়ে রোগীর রক্তনালীতে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। এ ধরনের চিকিৎসা শেষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে রক্তপাত মারাত্মক হলে মাথার হাড় কেটে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে চাপমুক্ত রাখা হয়। যেন মস্তিষ্কের সুস্থ অংশ আক্রান্ত হতে না পারে একে বলা হয় ডিকম্প্রেস ক্র্যানিয়্যাকটমি। এছাড়া, হাসপাতালে নেয়ার পর রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী সিটি-স্ক্যান সেইসঙ্গে ব্লাড সুগার টেস্ট, ইসিজি, এমআরআই ও সিটি এনজিওগ্রাম ইত্যাদি পরীক্ষার পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে।

স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ ও পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে, সেগুলোকে সংক্ষেপে বলা হয়ে থাকে, FAST এখানে F = Face মুখ বেঁকে যাওয়া, A = Arm হাত অবশ হয়ে আসা, S = Speech কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং T = Time বুঝানো হয়েছে, যাতে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

স্ট্রোক, মস্তিষ্কে কতোটা ক্ষতি করতে পারে তা নির্ভর করে এটি মস্তিষ্কের কোথায় ঘটেছে এবং কতোটা জায়গা জুড়ে হয়েছে, তার ওপর। সঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে নিলে ও চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তাকে সারা জীবন পঙ্গুত্বের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি মৃত্যু-ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

=সমাপ্ত=

 

ডক্টর খন্দকার পারভেজ আহমেদ

চেম্বার

ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ার লিমিটেড.

২২/২, বাবর রোড, কসমোপলিটন সেন্টার,

ন্যাশনাল কিডনি হসপিটাল, কলেজ গেট (এর বিপরীতে)

ভিজিটিং আওয়ার: বিকেল ৩টা থেকে ৪.৩০ পর্যন্ত।

সিরিয়াল দেবার জন্য যোগাযোগ: ০১৯২৪১৩৩১৯১

হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট অব নিউরোসায়েন্স

জেড.এইচ সিকদার উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল

……………………………………………………………………………………………………………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *